১৬ জুলাই ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নেতাকর্মীদের দাবির মুখে নিজ বাড়ি পল্লীনিবাসেই দাফন করা হয়েছে। এর আগে রংপুরে ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ জানাজায় স্থানীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। এসময় দাফন কোথায় হবে এ বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হেলিকপ্টারে করে পৈতৃক নিবাসে নেয়া হয় এরশাদের মরদেহ।।
এর আগে, রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার চতুর্থ ও শেষ নামাজে জানাজা।
এদিকে, জানাজা শুরুর আগমুহুর্তে এরশাদকে রংপুরে দাফনের দাবিতে হট্টগোল করতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। তারা বলেন, আমরা চাই আমাদের নেতার রংপুরেই দাফন করা হোক। অবশেষে নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, রংপুরের পল্লীনিবাসেই হবে এরশাদের দাফন। এতে সম্মতি জানান, স্ত্রী রওশনও।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ভালোবাসার জয় হয়েছে। রংপুরের মানুষ এরশাদকে ভালোবাসে এটা তার বহিঃপ্রকাশ। রংপুরের জনগণ যখন জোর দাবি তুললো এখানেই দাফন করতে হবে, আমরা আর সেই দাবি ফেলতে পারলাম না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা বলেন, যেহেতু এটা তার নিজের জায়গা নিজের বাড়ি। এখানে আমরা তার নামে উনার জীবনের সার্বিক বিষয় নিয়ে একটা মিউজিয়াম তৈরি করবো।
এর আগে চার কিলোমিটার হেঁটে জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়ি তার স্বপ্নের বাসভবন রংপুরের পল্লী নিবাসে নিয়ে যান দলীয় নেতাকর্মীরা।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এরশাদ। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পর গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকেন।
কারাগারে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রংপুর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি পল্লীবন্ধু এরশাদ।
দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদেও জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের আসনে। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসান।
Leave a Reply