ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০২১ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু এমপি মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে থাকার পর তিনি গতকাল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বুধবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট মো. মাহিন।
গত ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন আবদুল মতিন খসরু। ১৬ মার্চ সকালে তার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি করা হয়। অবস্থা ভালো না হওয়ায় ২৮ মার্চ রাত ১২টার দিকে আবদুল মতিন খসরুকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ১ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এরপর ৩ এপ্রিল আইসিইউ থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর অবস্থা খারাপ হলে সাবেক এই আইনমন্ত্রীকে মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আবদুল মতিন খসরুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তার মরদেহে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এর পর বাদ আসর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি এই শোক জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ও জনমানুষের নেতা হিসেবে মতিন খসরু চিরদিন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার উত্তরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একজন জননেতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে হারালাম, যিনি জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলায় আইনজ্ঞ হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শোক জানিয়েছেন। বুধবার বিকালে এই আইনজীবীর মৃত্যুতে তিনি শোক জানিয়ে বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রথিতযশা বিজ্ঞ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর সাথে আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক ছিল। তিনি অত্যন্ত নির্লোভ, নিরহংকারী এবং সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার অসামান্য অবদান রয়েছে। আইন অঙ্গনের সবাই তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন।
প্রধান বিচারপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক জোটের নবনির্বাচিত সভাপতি. বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশনের সভাপতি. লালন গবেষণা একাডেমী চেয়ারম্যান. বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি. দক্ষিণবঙ্গ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি. অনলাইন জার্নালিস্ট ইউনিটির সভাপতি. মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমান্ড কাউন্সিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি. ডেইলি মর্নিং অবজারভারের প্রধান সম্পাদক. সিনিয়র সাংবাদিক. বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব. বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
আবদুল মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আইনমন্ত্রী ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু গত ১৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন৷ আবদুল মতিন খসরু ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে এক মেয়ের জনক।
তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বছর-দুয়েক আগে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
Leave a Reply