ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ইং (দৈনিক দেশপ্রেম রিপোর্ট): যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে গাজা উপত্যকা খালি করতে চান। এ জন্য গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দিতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সাংবাদিকদের কাছে তাঁর এমন দৃষ্টিভঙ্গির কথাই তুলে ধরেছেন এক সপ্তাহ আগে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া ট্রাম্প। তাঁর এমন বক্তব্যে গাজায় আরেকটি জাতিগত নিধনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চান গাজার আরও ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডান আশ্রয় দেবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। রোববার (আজ) মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলবেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই মিসর (গাজা থেকে) আরও মানুষ (ফিলিস্তিনি) নিয়ে যাক। আপনারা সম্ভবত ১৫ লাখ মানুষের কথা বলছেন। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গাজা খালি করতে হবে আমাদের।’
জর্ডানের বাদশাহর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুশি হব, যদি আপনি আরও বেশি করে (ফিলিস্তিনিদের) আপনাদের দেশে আশ্রয় দেন। কারণ, গাজা উপত্যকা এখন সত্যিকার অর্থেই একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
ট্রাম্প বলেন, গাজার এসব বাসিন্দাকে সাময়িক সময়ের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে এসব দেশে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে এটা (গাজা) এখন একটি ধ্বংসযজ্ঞ। প্রায় সবই ধ্বংস হয়েছে। মানুষ মারা যাচ্ছে।
তবে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করে আসা এই সংগঠনটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ উসকে দেওয়ার শামিল।
গাজার বাসিন্দা প্রায় ২৩ লাখ। ট্রাম্পের এ মন্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন কাতারে অবস্থিত জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আরিয়ান। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের এ ধরনের মন্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। কারণ, আমরা দেখেছি বিগত দেড় বছর ধরে এমন দাবি তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া গাজা যুদ্ধের শুরুতেও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা যতটা সম্ভব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।’
ইতিহাসবিদেরা বলছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও সরে যেতে বাধ্য করা হলে নাকবার (মহাবিপর্যয়) মতো কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
ইসরায়েলকে ২০০০ পাউন্ডের বোমা সরবরাহে সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নিতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র শনিবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানান।
ট্রাম্পও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘এমন অনেক জিনিস, যা ইসরায়েল চেয়েছিল, অর্থও দিয়েছিল; কিন্তু বাইডেন সরবরাহ করেননি। সেগুলো এখন ইসরায়েলের পথে রয়েছে।’ইসরায়েল সরকার বেসামরিক মানুষের ওপর, বিশেষ করে গাজার রাফা শহরের আশ্রয় নেওয়া লাখো উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনের ওপর এ বোমা দিয়ে হামলা করতে পারে, এ আশঙ্কা থেকে বাইডেন এই বোমা ইসরায়েলকে সরবরাহ করা থেকে বিরত ছিলেন।
Leave a Reply