হেলথ ডেস্ক, ২৮ জুলাই ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না বায়োটেকনোলজি। মডার্নার টিকার চূড়ান্ত ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এই ধাপে ৩০ হাজার জনকে প্রয়োগ করা হবে টিকা।
অক্সফোর্ড ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজিতে টিকা বানিয়েছে আর মডার্না মেসেঞ্জার আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) সিকুয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে করোনার টিকা তৈরি করেছে।
মডার্নার তৈরি এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে এসেছে অক্সফোর্ডেরও আগে। এই টিকাও মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে বলে জানানো হয়েছে।
মডার্নার সিইও স্টিফেন ব্যানসেল জানিয়েছেন, তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্বে টিকার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ৩০ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই ট্রায়ালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজের ডিরেক্টর এবং হোয়াইট হাউসের মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এপিডেমোলজিস্ট অ্যান্থনি ফৌজির তত্ত্বাবধানে এমআরএনএ ভ্যাকসিন বানিয়েছে মডার্না। এই গবেষণায় রয়েছেন এনআইএইচের অধীনস্থ ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় ভ্যাকসিন ও ওষুধ নির্মাতা সংস্থা লোনজা গ্রুপ এজির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তিও হয়েছে মডার্নার।
সিইও স্টিফেন জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সফল হলে ভ্যাকসিনের ডোজ বাজারে আনা শুরু হয়ে যাবে। লোনজা গ্রুপের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তিতে প্রতি বছরই প্রায় ১০০ কোটি ডোজে ভ্যাকসিন তৈরি হবে বলে জানিয়েছে মডার্না।
এমআরএনএ ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয় মার্চ মাসে। প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয় দুই সন্তানের মা ৪৩ বছরের জেনিফার হ্যালারকে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয় মে মাসে। প্রথম পর্বে ৪৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হয়েছিল।
স্টিফেন বলেছেন, তিনটি দলে ভাগ করে তিন রকমের ডোজে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ২৫ মাইক্রোগ্রাম, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ও ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ দেওয়া হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবকদের। যার মধ্যে ২৫ মাইক্রোগ্রামের ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয় ১৩ জনকে, ১০০ মাইক্রোগ্রামের ডোজ দেওয়া হয় ১৫ জনকে এবং ২৫০ মাইক্রোগ্রামের ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয় ১৪ জনকে। বাকি তিনজনকে আরও বেশি ডোজের শট দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। প্রত্যেকের শরীরেই আরএনএ ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আগের থেকে বেড়েছে। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ এই গবেষণার রিপোর্ট সামনে আনে মডার্না।
ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমআরএনএ হল শরীরের বার্তাবাহক। কোন কোষে প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, কোথায় কী রাসায়নিক বদল হচ্ছে সব কিছুর জিনগত তথ্য বা ‘জেনেটিক কোড’ জোগাড় করে সেটা শরীরের প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। এমন বার্তাবাহক এমআরআনএ-কেই ভ্যাকসিন তৈরির ভিত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
এই ভ্যাকসিনের কাজ হবে শরীরের কোষগুলোকে অ্যান্টি-ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী বব ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘বাইরে থেকে প্রোটিন-ড্রাগ ইনজেক্ট না করে, এমএরএনএ ভ্যাকসিন দিয়ে যদি কোষের মধ্যেই ভাইরাস-প্রতিরোধী প্রোটিন তৈরি করা যায় তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বাড়ে।’
Leave a Reply