ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): হিন্দাল শারক্বীয়ায় অর্থায়নের অভিযোগে ডা. মো. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়াতে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট বলছে, জামায়াতের আমির ওই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়াদের পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য অর্থায়ন করেছেন। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন তারই ছেলে ডা. রাফাত, যিনি গত ৯ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন।
সিটিটিসি প্রধান জানান, জামায়াতের আমিরের ছেলে গ্রেপ্তার ডা. রাফাত ১১ জনকে নিয়ে পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে’ (কেএনএফ) প্রশিক্ষণের জন্য হিজরত করেছিলেন। সেই হিজরতের সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছিলেন আমির ডা. শফিকুর। তার সিলেটের বাসায় ডা. রাফাত ও তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম করতেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আজ ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৯ নভেম্বর তার ছেলে ডা. রাফাত চৌধুরীকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারও আগে হিজরত করা অবস্থায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তিনজকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমীরপুত্র রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে করে জানা যায়, তিনি (রাফাত) আগে ছাত্র শিবির করতেন। এছাড়া তার আগের তিনজন সহকারীও ছাত্র শিবিরের সদস্য ছিল। রাফাতের সঙ্গে গ্রেপ্তার আরিফও শিবিরের সদস্য ছিল।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আমিরের ছেলে রাফাত জানান, জামাতুল হিন্দাল ফিল শারক্কীয়ার আগে আনসার আল ইসলামে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেই সংগঠনে যোগ দেন। সিলেট অঞ্চলে কাজ করার সময় রাফাত অনেককে আনসার আল ইসলামে যোগ দেওয়াতে সমর্থ হন। পরবর্তীতে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল হিন্দাল ফিল শারক্কীয়াতে ডা. রাফাতসহ তার সদস্যরা যোগদান করেন।
রাফাতের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম সিলেট অঞ্চল থেকে ১১ জন বান্দরবানের কুকি-চিনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হিজরত করেন জানিয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কিন্তু বান্দরবানে কুকি-চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তারা পাহাড় থেকে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে রাফাতের কয়েকজন সহকারী তাহিয়াতের নেতৃত্বে হিজরত করেন। তাহিয়াত কুকি-চিন ক্যাম্পের সর্বশেষ প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলেন।
জামায়েতের আমির শফিকের সিলেটের বাসায় রাফাত ও তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম করতেন বলে জানান আসাদুজ্জামান। তার ভাষ্য, এই পুরো বিষয়ে ডা. শফিক অবগত ছিলেন। ক্ষেত্র বিশেষ সহযোগিতা করেছেন।
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে রাফাতসহ তার কয়েকজন সহকারী তার বাবা জামায়াতের আমিরের সম্মতিক্রমে বান্দরবান থেকে ফেরত আসেন। তাদেরকে জামায়াতের আমির শফিক বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পুলিশের নজর এড়াতে দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে চট্টগ্রাম থেকে কিছু ঢাকায় এবং কিছু সিলেট অঞ্চলে চলে যায়। বান্দরবানে হিজরতের ১১ জনের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার শফিক বহন করেন এবং খরচ দিয়ে কুকি-চিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠিয়েছিলেন। সেই কানেকশনেই আমরা জামায়াতের আমিরকে গ্রেপ্তার করেছি।
‘যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়’—বলেন তিনি।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের আরেকজন চিকিৎসক শাকিরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
জামায়াতের নেতারা জঙ্গিবাদকে উদ্বুদ্ধ করছে কি না জানতে চাইলে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। আগে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। জামায়াতের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের পরস্পর বোঝাপড়া থাকতে পারে অথবা তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতাও করতে পারে৷ নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা জামায়াতের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে।’
জামায়াতের আমির ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আর কারো সম্পৃক্ততা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ‘আমিরের ছেলের নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেয়েছি। সে প্রথম হিজরতকারী এবং তার নেতৃত্বে একটি বড় সংখ্যাক সদস্য একযোগে ১১ জন হিজরত করেছিল। যে সংগঠনের প্রধানের ছেলে প্রশিক্ষণ নিতে হিজরত করে সেই সংগঠনের অন্যান্য আঞ্চলিক পর্যায়ের সমর্থন আসে বলে আমরা ইতোমধ্যে তথ্য পেয়েছি।’
এদিকে শফিকুর রহমানের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
Leave a Reply