ঢাকা, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। জনগণের আন্দোলনের সামনে সব স্বৈরাচারকেই নতি স্বীকার করতে হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকেও করতে হবে।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নয়টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। আমরা চাই গণতন্ত্র।’
মোশাররফ বলেন, ‘গত রাত (বৃহস্পতিবার) প্রায় সোয়া ৩টার দিকে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোষাকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ তাদেরকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে- নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এত গভীর রাতে সাদা পোষাকে ধরে নিয়ে আসার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উস্কানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ, র্যাব, সোয়াত বাহিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান একযোগে আক্রমণ করে অনেকে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের উপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজির বিহীন। তারা দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভিতরে নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, সেগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।’
মোশাররফ বলেন, একই দিনে অফিসের ভিতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতারাসহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেপ্তারকৃত অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা সব নেতাকর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া সত্তেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। আমরা না চাওয়া সত্বেও অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণদিত হয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীনভাবে ২৬ শর্তে গণ-সমাবেশের যে সম্মতি দেয়া হয়েছিল- তা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গ কারণে আমরা তা প্রত্যাখান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোন উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেয়ার যে অনুরোধ জানিয়েছি, তাতে দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে।
মোশাররফ বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার বরাবরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশের জন্য পুলিশ সম্মতি দেয়। অতএব ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার, ঢাকা মহানগরীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।’
‘আমরা তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকারী বাহিনী সমূহ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা গত প্রায় ১৫দিন যাবৎ প্রকাশ্যে হুমকী দিয়ে জনসভা বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা বিভাগসহ সকল বিভাগের সকল জেলা, উপজেলা, মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই এবং সমর্থনে চলছে।’ বলেন মোশাররফ।
রাজধানী ঢাকায় সরকারি দল হঠাৎ করেই মিছিল করছে আর আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, আমাদের এ গণসমাবেশ দুই মাস আগ থেকেই নির্ধারিত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply