স্পোর্টস ডেস্ক, ১৭ জুন ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): ৫১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটের এই জয় যেন টনটনের সবুজ প্রকৃতিতে লাল সূর্যোদয়। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস বিশ্বকাপে আবারো রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিলো টাইগাররা। সাকিব শেষ পর্যন্ত অপরাজিত রইলেন ১২৪ রানে। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তাকে সঙ্গ দিতে এসে দারুণভাবে নিজের অভিষেক বিশ্বকাপ ম্যাচে হাল ধরেছিলেন লিটন কুমার দাস। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা জুটির মালিক এখন এ দুজন। লিটন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ৯৬ রানে। এ জয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টাইগাররা বাঁচিয়ে রাখলো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার আশাও। পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এলো বাংলাদেশ।
৩’শ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। তবে ২৯ রান করে সৌম্য ফিরে গেলে এই জুটি ভাঙে দলীয় ৫২ রানে । এবার ১৯৮৩’র ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড গাওয়ারের মতো বাংলাদেশ দলের হাল ধরলেন সাকিব। কিন্তু সঙ্গ দিতে থাকা তামিম সাজঘরে ফিরলেন দুর্ভাগ্যজন রানআউটে। ব্যক্তিগত ৪৮ রানে তামিমের খেলা বল ফলো থ্রোতে হাতে পেয়ে যান বোলার প্রান্তে শেলডন কটরেল। ব্যাটিংয়ের পর দুই পা ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসা তামিমের উইকেট ভেঙে দেন ক্ষিপ্র থ্রোতে। দলের তখন ১২১ রানে ২ উইকেট নেই। দুঃচিন্তা ভর করলো টাইগার শিবিরে যখন মুশফিকুর রহীম ফিরে গেলেন মাত্র ১ রান করে। কিন্তু কে জানতো ৪ ম্যাচ পর একাদশে জায়গা পাওয়া লিটন দাসই হবেন সাকিবের ভারসা। দু’জন জুটি বেঁধে যখন এগিয়ে যেতে লাগলেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ চিৎকারে কখন উত্তাল সমারসেট স্টেডিয়াম।
তবে গোটা ম্যাচেই সাকিব লড়াই করেছেন দুর্দান্ত। ক্যারিবীয় পেসার ওশান থমাসের বলে দুর্দান্ত এক কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তুলে নেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের তিন অঙ্ক ছুঁতে এবার লেগেছে ৮৩ বল। ওয়ানডেতে এটি সাকিবের নবম সেঞ্চুরি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম। শুধু তাই নয় নিজে ছুঁয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৬ হাজার রানের মাইলফলক। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সব ব্যাটসম্যানকে ছাড়িয়ে সাকিবের সংগ্রহ ৩৮৪ রান। শুধু তাই নয় সমারসেট স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি তালিকাতে সাকিবের জায়গা এখন গাওয়ারের পরই। অন্যদিকে সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করেছেন লিটনও। শুরুতে একটু সময় নিলেও এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান পরে ঝড় তুলেছেন। ৪৩ বলে ৫০ করার পথে হাঁকিয়েছেন চারটি চার ও একটি ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ৬৯ বলে অপরাজিত থেকেছেন ৯৪ রানে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগাররা জয় পায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ রানের দলীয় স্কোর গড়ে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে জিততে হেরে যায় টাইগাররা। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়ে যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল হারে বাজেভাবে। সেই ম্যাচে একাই লড়াই করে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন সাকিব। তবে ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি। দায়ী করা হয়েছিল টসে জিতে ইংলিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে। গতকালও টসে জিতে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর খেসারতই দিতে হবে ভাবছিলেন অনেকে। কিন্তু না, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আরো একবার দেখিয়ে দিলো- ‘আমরাও পারি।’
Leave a Reply