হেলথ ডেস্ক, ২৪ এপ্রিল ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করা প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার একটি ভ্যাকসিন মানবেদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানব শরীরে প্রথমবারের মতো করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেন।
প্রথমবারের মতো দুজনের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। আরও প্রায় ৮০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি এটিই প্রথম ভ্যাকসিন। বিজ্ঞানীদের তৈরি এই ভ্যাকসিন সফল হলে বড় ধরনের এক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে গোটা বিশ্ব।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নেওয়াদের মধ্যে একজন হলেন এলিসা গ্রানাটো। তিনি বলেন, ‘আমি একজন বিজ্ঞানী, তাই যেভাবেই পারি গবেষকদের সাহায্য করতে চাই।’
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ইবোলার প্রতিষেধক তৈরিতে দিশা দেখানো সারা গিলবার্ট জানান, তিনি নিশ্চিত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই প্রতিষেধক কাজ করবে। গিলবার্ট আরও বলেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধকের কাজ করবে।
চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন চূড়ান্তভাবে মানবদেহে প্রয়োগের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক মানবদেহে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, এতে সুফল আসলে ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ব্রিটিশ সরকার বিজ্ঞানীদের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের ২০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ইমপেরিয়াল কলেজকে ২২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ভ্যাকসিন চূড়ান্তভাবে মানবদেহে প্রয়োগে আমরা আশাবাদী। ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ সরকার ও ব্রিটেনের কয়েকটি দাতব্য সংস্থার অর্থায়নে ২০০৫ সালে গড়ে তোলা হয় জেনার ইনস্টিটিউট। উদ্দেশ্য সংক্রমণজনিত রোগ নিয়ে গবেষণা আর টিকা তৈরি। এডওয়ার্ড জেনারকে বলা হয় ভ্যাকসিনের জনক। প্রায় ২০০ বছর আগে গুটি বসন্তের টিকার অন্যতম আবিষ্কারক ছিলেন। গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করে থেমে থাকেননি তিনি। জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে এই টিকার আওতায় নিয়ে আসতে তার অবদান চিরস্মরণীয়।
এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ড. সারাহ গিলবার্ট। ভাইরাস নিয়ে কাজ করেন। সারাহার নেতৃত্বে অক্সফোর্ডের একদল বিজ্ঞানী জানুয়ারি মাস থেকেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করেন। মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকারের একটি সংস্থা ২২ কোটি টাকার অনুদান দেয় এই গবেষণায়। সারাহ ও তাঁর দল অন্য সংক্রমণজনিত রোগের ভ্যাকসিন তৈরির পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই অভিজ্ঞতা করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply