ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরকার পুলিশি অভিযান চালিয়েছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তবে এত কিছু করেও তারা আমাদের সমাবেশ পণ্ড করতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘৭ ডিসেম্বর আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তছনছ করে বর্বরতা চালানো হয়েছে। লন্ডভন্ড করেছে। সেখান থেকে সিনিয়র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কম্পিউটার ভেঙে ফেলছে।’
‘এসবের লক্ষ্য ছিলো ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশ পণ্ড করা। একইভাবে তারা বিভিন্ন বিভাগের গণসমাবেশ পন্ড করতে পরিবহন ধর্মঘট ও হামলা চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছিলো। তবুও ঢাকায় আমাদের গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘সরকার ভেবেছিল আমাদের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করে সমাবেশ পণ্ড করবে। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেনি। সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তারা চলে যাবে। কিন্তু আপানারা থাকবেন। সুতরাং আপানারা জনগণের থাকুন।’
‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্র হত্যা করে দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে অবৈধভাবে সংসদ গঠন করেছে।’
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাতে গিয়ে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। ব্যাংক গুলো লুট করা হচ্ছে। মানুষ আরো গরিব হচ্ছে। তারা ঠিকমতো খেতে পারে না।’
মোশাররফ আরও বলেন, ‘সরকার বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশ রায় দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছে। তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। তেমনিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য ব্যবহার করছে।’
‘আওয়ামী লীগ এত নির্যাতন করেও বিএনপি দুর্বল হয়নি। যার প্রমাণ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ। জনগণ পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে, এই সরকারকে তারা চায় না। সেই লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছি।’
শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে পতন ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে।’
‘প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যদের বলবো, আপনার কোনো দলের কর্মী নন। আপানারা শপথ নিয়েছেন। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনে শত্রুতা নেই। মনে রাখবেন সরকারের অনৈতিক কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে র্যাব নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে। সুতরাং বেগুনী হুকুম তামিল করবেন না।’
দুপুর ২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বেলা এই সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু সমাবেশ পরিচালনা করেন।
অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশের আগে সরকার নিজেরাই রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। লাখ লাখ মানুষ ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণ করে শান্তিপূর্ণভাবে সফল করেছে।’
‘আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার রাজনীতি করে। তারা মানুষ হত্যা করে। কিন্তু এভাবে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে দেশের মানুষকে ঠেকানো যাবে না। এখনো বলছি শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিন। বিএনপির সমাবেশে জনগণ রায় দিয়েছে যে তারা আপনাদেরকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে কাউকে টাকা দিয়ে আনা হয় না। আমাদের সমাবেশে যারা আসেন তারা দেশের জন্য ও মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর অন্য দলের সভায় যারা যান তাদেরকে বিরিয়ানি খাওয়া থেকে শুরু করে টাকা পয়সা ও টিশার্ট দিয়ে সমাবেশে নিয়ে আসা হয়।’
‘৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যে বর্বরতা ঘটানো হয়েছে, তা গনতন্ত্রকামী মানুষের কাছে কালো অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হবে। তারা যেভাবে লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে নেতাকর্মীদের মেরে আহত করেছে, লুটপাট করেছে, অসভ্য ব্যবহার ও আচরণ করেছে।’
‘তারা আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভেঙে ফেলছে। তারা হিংস্র। তারা হত্যাকারী। এই চেহারা এখন শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবে উন্মোচিত হয়েছে।’
বিদেশি মিশনগুলোতে সরকারের দেওয়া চিঠির বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার বিদেশি দূতাবাসে যা পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে তারা দোষী নাকি নির্দোষ তা জনগণের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘সরকার বিদেশিদের বলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামাবেন না। আবার তারাই বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। বিদেশিদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। কোনো কাজ হবে না। দেশের জনগণ এই সরকারকে আগেই বাতিল করেছে এখন বিশ্ব তাদেরকে বাতিল করেছে। তাদের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো পথ নেই। ইনশাআল্লাহ আমাদের আন্দোলন সফল হবেই।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে লুটপাট চালিয়েছে ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশ পুলিশবাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে নারকীয় তান্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে।’
‘এই সরকারের অন্যায় অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। আপনারা কাকে রক্ষার জন্য এই কাজ করছেন? গুটিকয়েক লোককে রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আমরা বলবো জনগণের পক্ষে থাকুন। বিচারকদের বলবো, আপানার শপথ নিয়েছেন কিন্তু তা পালন করেননি। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর কাছে আপনাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সেটা মাস্তানদের বক্তব্য। তিনি ভোট ডাকাত। তিনিই আবার বলেন, ভোট চোরদেরকে জনগণ ভোট দেবে না। এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। তা না হলে তাকে বাধ্য করা হবে।’
মির্জা ফখরুল-আব্বাসসহ পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘সরকারের বুঝতে হবে বিএনপি দেশে ভেসে আসেনি। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া হবে না।’
‘ভেবেছেন সবাইকে গ্রেপ্তার করে আর গুলি করে হত্যা করে ক্ষমতায় থাকবেন। সেটা ভুল। এভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একতরফা ও বিনাভোটের নির্বাচন দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।’
সমাবেশ শুরুর আগে সকাল থেকে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে দলীয় অফিসের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ বিভাগীয় ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তার এক পাশে নাইটিংগেল-ফকিরাপুলের মোড় বন্ধ ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
Leave a Reply