৮ জুলাই ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): সংগৃহীত ছবি নড়াইলের কালিয়ায় অসাধু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছেন। আর কৃষকের ধান গোলায় থেকে যাচ্ছে। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বাড়িতেই রেখে দিচ্ছেন তাদের উৎপাদিত ধান। আর অভাবগ্রস্থরা কমদামে বিক্রি করে আরোও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কৃষকদের জন্য দেয়া সরকারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ধানে খাদ্য গুদামের সরকারী টার্গেট পূরণ হচ্ছে। সাধারণ অনেক কৃষক খাদ্য গুদামে ধান দিতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টদের এদিকে কোন খেয়ালই নেই।
কালিয়ার প্রকৃত কৃষকরা জেলা প্রশাসক বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কালিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, কালিয়ায় চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে ১লক্ষ ৯ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে সরকার কালিয়া ও বড়দিয়া খাদ্য গুদামের জন্য ধান ক্রয় করবেন মোট ১ হাজার ৪২১ মেট্রিক টন। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী অত্র উপজেলার খাদ্য গ্রহণ করতে ধানের প্রয়োজন ৭০ হাজার ৯১৯ মেট্রিক টন। বাকী ধান থাকে ৩৭ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন। কৃষকের উৎপাদিত ধান পুরোটাই রয়ে গেছে তাদের ঘরের গোলায় বা বস্তায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ৪৪৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবেন। যা উৎপাদিত ধানের তুলনায় একেবারেই নগন্য। তাও সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ক্রয় করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রথম পর্যায় কালিয়া খাদ্য গুদাম ২৬২ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করেছে। বাকী আছে ১৮১ মেট্রিক টন। জেলা প্রশাসক অনজুমান আরাকে এনে মঙ্গলবার (২জুলাই) ফটোসেশন করে মাত্র ৮ মেট্রিক টন ধান ক্রয় দেখানো হয়। এরপর ধান ক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কালিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও খাদ্য পরিদর্শকের যোগসাজোশে সিন্ডিকেট চক্র রাতে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ধান পূণরায় ক্রয় করার আগে মাইকিং করবেন না বলে খাদ্য গুদামের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পুণরায় কবে ধান ক্রয় করবেন তাও তারা জানাচ্ছেন না।
কৃষকদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে বলে বাকা গ্রামের শরীফ নাসির মাহমুদ নামে এক কৃষক মন্তব্য করেন। নওয়াগ্রামের কৃষক গোলাম জানান, কৃষিকার্ড নিয়ে কালিয়া খাদ্য গুদামে ধান বিক্রয়ের জন্য গেলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নানা তাল বাহানা করে ফেরত দিচ্ছেন। একই অভিযোগ জোকা গ্রামের মামুন নামে অপর কৃষকের।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার সুবির কুমার বিশ্বাস সোমবার বলেন, চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিধায় সর্বাগ্রে প্রকৃত কৃষকদের প্রাধান্য দিতে হবে। তা-নাহলে তারা কৃষিকাজে উৎসাহ হারাবে। এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত। তবে কালিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, যথাযথ নিয়মে কৃষিকার্ড দেখেই ধান কেনা হয়েছে। খাদ্য গুদামে জায়গা নেই আর জুন ক্লোজিং এর জন্য ধান ক্রয় বন্ধ আছে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায় ৮৮৮ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। ওই ধান ক্রয়ের সময়ও যথাযথ নিয়মে মেনেই ধান কেনা হবে। তবে জায়গা কম থাকায় সব ধান এ গুদামে নেয়া হবে না। অল্পকিছু এখানে নেয়া হবে। বেশির ভাগ নেয়া হবে বড়দিয়া গুদামে।
Leave a Reply