স্পোর্টস ডেস্ক, ১১ জুলাই ২০১৯ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): বিশ্বকাপের আসরে এখন পর্যন্ত ৬টি সেমিফাইনাল খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এর কোনোটিতেই হারেনি। শুধু তাই নয়, ৬ বার ফাইনাল খেলে ৫টি শিরোপা ঘরেও তুলেছে অজিরা। ছয়বার সেমি খেলে অপ্রতিরোধ্য বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এই ইতিহাস ভাঙার দিন আজ। তবে সেজন্য স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে টপকাতে হবে ২২৩ রান। বিশ্বকাপের আসরে দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে টস জিতে ব্যাট করে ইংলিশ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ১ ওভার আগেই শেষ হয়ে যায় অজিদের ইনিংস।
বার্মিংহামের এজবাস্টনে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে অ্যারন ফিঞ্চের দল। দ্বিতীয় ওভারেই আর্চারের গতিময় বোলিংয়ের সামনে কাবু হয়ে ফেরেন অজি ক্যাপ্টেন।
শুধু আর্চার নয়, আরেক ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকসও পেস সুইংয়ে ছিন্নভিন্ন করে তোলে অজিদের টপঅর্ডার। ফিঞ্চের পরপরই ৯ রান করে ক্রিস ওকসের বলে বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মেশিন ডেভিড ওয়ার্নারও। ক্রিস ওকসকে সামাল দিতে পারেননি আরেক অজি ব্যাটসম্যান হ্যান্ডসকম্ব। মাত্র ৪ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর অজিদের হাল ধরেন স্মিথ ও অ্যালেক্স ক্যারি। দুজন মিলে শতরানের জুটিও গড়েন। তবে সে জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ। ক্যারিকে অর্ধশতক হাঁকানোর আগেই বিদায় করেন তিনি। একই ওভারে হাফসেঞ্চুরি করা স্মিথকে সঙ্গ দিতে আসা স্টয়নিসকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজ ঘরে ফেরান আদিল রশিদ। তার জোড়া আঘাতে চাপে পড়লে নতুন ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়াকে চিন্তামুক্ত করার চেষ্টা করেন। তার স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে আসে ২১টি রান।
যার মধ্যে ২ চার ও ১টি ছয়ের মারও ছিল। কিন্তু ইংলিশ পেসার আর্চারের বল বুঝে ওঠার আগেই ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল। পুরো আসরজুড়ে দাপুটে অস্ট্রেলিয়া আজ যেন ছন্দহীন। স্মিথকে সঙ্গ দিতে এসে কেউই দাঁড়াতে পারেননি। ৬ রান করা কামিন্সও ফেরেন আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে। এতেই ব্যাট হাতে চরম বিপর্যয়ে পড়ে ৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা। দলের এই বিপদের সময় একাধারে উইকেট আগলে রাখা স্মিথও রান আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। অজি ব্যাটিং অর্ডারে তিনিই একমাত্র সর্বোচ্চ ৮৫ রান সংগ্রহ করেন। ইনিংসের শেষ দিকে তার সঙ্গে বেশ ছন্দে ব্যাট চালান মিচেল স্টার্ক। তবে তড়িঘড়ি করে রান নিতে গিয়ে তিনিও ভুল শট খেলে জস বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তিনি করেন ৩৬ বলে ২৯ রান।
এদিকে ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওকস মাত্র ২০ রান দিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া আদিল রশিদও নেন তিন উইকেট। পাশাপাশি আর্চার ২ ও মার্ক উড ১টি করে উইকেট সংগ্রহ করেন।
এর আগে বুধবার আসরের হট ফেবারিটের তকমা পাওয়া ভারতকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় নিউজিল্যান্ড। টানা
দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে নাম লেখালো কিউইরা। আজ দ্বিতীয় সেমিতে ঠিক হবে কে খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সেমিতে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া।
এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিতে হার দেখেনি অস্ট্রেলিয়া। ৬ বারই জয় পেয়েছে তারা। এবার ৭ম বারের মতো ফাইনালে পা রাখার সুযোগ। অপরদিকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলেছে ৩ বার। সেমিতে তারা হার দেখেছে ২ বার।
এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ৯ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে সেমিতে এসেছে। অপরদিকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ৩ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থেকে সেমি নিশ্চিত করে।
এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া একাদশে একটি পরিবর্তন। ইনজুরি আক্রান্ত উসমান খাজার পরিবর্তে একাদশে আজ দেখা যাবে পিটার হ্যান্ডসকম্বকে।
মুখোমুখি দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৪৮ বার খেলেছে দু’দল। ৮২ বার জয় পেয়েছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আর ৩ বারের রানার্সআপ ইংল্যান্ড জয় পায় ৬১ বার। পরিত্যক্ত হয় ৩ ম্যাচ। আর বিশ্বকাপে ৮ বারের দেখায় ৬ ম্যাচেই জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
দুই দলের অবস্থান আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড আছে সবার শীর্ষে। ইংলিশদের রেটিং পয়েন্ট ১২৩, আর ১১২ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ড একাদশ জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, এউইন মরগান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, জোফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, মার্কোস স্টইনিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জেসন বেহরেনডর্ফ, নাথান লায়ন।
Leave a Reply