ঢাকা, ১২ এপ্রিল ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): দিন যত যাচ্ছে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে সবাইকে। দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ছুটি।
তবে সচেতনতার বাইরেও করোনা থেকে বাঁচতে নানা বিষয়ে ঝুঁকছে মানুষ। শুরুতে থানকুনির পাতা খাওয়ার হিড়িক লেগেছিল মানুষের মধ্যে। বলা হচ্ছিল, থানকুনি পাতার রস খেলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হবে না। রাতবিরাতে থানকুনির পাতা খুঁজতে নেমে পড়েছিলেন গ্রামের মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত থানকুনি পাতার সংকট তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন এলাকায়।
থানকুনি পাতার পর এবার নতুন গুজব ছড়িয়েছে গ্রামাঞ্চলে। বলা হচ্ছে, মাথা টাক করলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। শুরু হয়ে গেছে দলবেঁধে মাথা টাক করা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দলে দলে মাথা টাক করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ঠিক হচ্ছে না। তারা একসঙ্গে মিছিলের মতো দল বেঁধে মাথা টাক করছেন। দলে দলে পুকুরে নেমে গোসল করছেন। এসব দলীয় ছবি তুলে আবার ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব ছবি দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই কাজে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোশতাক আহমেদ খান একটি ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। লিখেছেন, ‘মাথা ন্যাড়া করলে করোনা হয় না, এই গুজবে কান দেবেন না। কান দেয়ার হিড়িকে সামাজিক দূরত্ব কমে এসেছে। বিপদ আসন্ন!’
জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে গুজবে কান দেওয়ার প্রবণতা বেশি। মাথা টাক করা নিয়ে এখন একটা গুজব সারা দেশে চলছে। কে বা কারা ছড়িয়েছে যে মাথা টাক করলে করোনা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘মাথা টাক করতে গিয়ে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানছে না। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই গুজবের বিরুদ্ধে শক্ত প্রচারণা প্রয়োজন। যে করেই হোক মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি বোঝাতে হবে।’
ফেসবুক ব্যবহারকারী ওবায়দুর রহমান লিখেছেন, ‘চলছে দলবেঁধে বাঙালির আরেকটি হুজুগে কর্ম মাথা টাক করার প্রতিযোগিতা। মাথা টাক করলে নাকি করোনা ভাইরাস অ্যাটাক করতে পারবে না!’
সারা দেশে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিয়ে জানা গেছে, মাথা টাকের ছবি যতটা না ফেসবুকে আসছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ মাথা টাক হচ্ছে। তারা করোনা থেকে বাঁচতে এখন মাথা টাককে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, মাথার চুল ফেলার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যদি এটা প্রচার করে থাকে যে, চুল ফেললে করোনা হবে না, তাহলে তা ভুল। বরং এই অবস্থায় কেউ যদি ঘরে না থেকে গণজমায়েতে যান বা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ান, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই মুহূর্তে ঘরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, দীর্ঘ ছুটিতে সেলুন বা নরসুন্দরের দোকানগুলো বন্ধ থাকবে। এই ছুটি আরো কত লম্বা হয় তার ঠিক নেই। চুল ছাঁটার সুযোগ হয়তো দীর্ঘদিন পাওয়া যাবে না। তাই চুল ফেলে দিচ্ছেন তারা।
সাংবাদিক আজিজুর রহমান বলেন, ‘সেলুন এখন বন্ধ। পরিস্থিতি ঠিক হলেই যে সেলুনে যাওয়া যাবে তা নয়। কারণ এই ভাইরাস সহজে নির্মূল হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই চুল ফেলে দিয়েছি। যেন সেলুনে যেতে না হয়।’
Leave a Reply