সুনামগঞ্জ, ২২ এপ্রিল ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): সুনামগঞ্জ জেলার হাওড়ে এবং সমতলে ২,১৯,৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে এবার। টার্গেট রয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধানের। কৃষকরা জানান, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিন্তে গোলায় তোলতে পারবেন কি-না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের।
অন্যান্য বছর দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে শ্রমিকরা সুনামগঞ্জে গিয়ে ধান কাটতেন। প্রাণঘাতি করোনা প্রতিরোধের জন্য দেশব্যাপি চলছে লকডাউন। করোনার কারণে এবার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে শ্রমিকরা যাতায়াত করতে পারছেন না। যে কারণে বিপাকে রয়েছে বৃহত্তর এই হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। তাছাড়াও রয়েছে অকাল বন্যার শঙ্কা। সম্প্রতি কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কষৃকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় হাওরাঞ্চলের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওড়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাস্তে হাতে ধান কাটছেন আনসার ভিডিপি’র চার হজার সদস্য, দুই হাজার শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অসহায় বোরো চাষিদের ধান কাটার বিষয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন এই বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। পরে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সিলেট রেঞ্জের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। সুুনামগঞ্জের জেলা কমান্ডান্ট এনামুল খাঁনের সমন্বয়ে ধান কাটছেন এই বাহিনীর সদস্যরা।
জেলা কমান্ডান্ট এনামুল খাঁন জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ৩৩টি হাওড়ের এবং সমতলের ২,১৯,৩০০ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটার লক্ষ্য নিয়ে ১১টি উপজেলা থেকে তরুণ আনসার-ভিডিপি ৪ হাজার সদস্য নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২১শে এপ্রিল থেকে জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় এবং ২২শে এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, জগন্নাথপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ধান কেটেছে তারা। সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার আনসার ভিডিপি সদস্য রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার পাশাপাশি সিলেট জেলার ১২টি উপজেলায় ৮০৫৬৫ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪৬৩৬০ হেক্টর এবং মৌলভীবাজার জেলার দুটি উপজেলায় ৫৩৫৩০ হেক্টর জমির ধান কাটতে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আনসার-ভিডিপি সদস্যরা নিন্ম আয়ের শ্রমিক। তাদেরকে জেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। রয়েছেন শিক্ষকবৃন্দও।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ২৫শে এপ্রিলের আগেই ধান কাটা শেষ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। ২৫শে এপ্রিলের আবহাওয়া খারাপ হতে পারে। ধান ঘরে তোলতে স্বেচ্ছায় অনেক মানুষ কাজ কাজ করছেন। তাদের মধ্যে যারা অস্বচ্ছল তাদেরকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।
Leave a Reply